শীতকালে ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়- সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, শীতকালে ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় এবং ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে তা জানার জন্য অনেকে খোঁজা খোঁজি করে থাকেন কিন্তু সঠিক তথ্য পান না। এই আর্টিকেলটি ভালো করে পড়লে আপনি আপনার মনের মতো তথ্য পেতে সহায়তা করবে। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।
এছাড়াও অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটার কারণ কি, শীতকালে ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফেটে যায় কেন এবং শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন এই সকল বিষয় জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা, যা বিশেষ করে শীতকালে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় বেশি দেখা যায়। এটি সাধারণত ঠোঁটের আর্দ্রতা কমে যাওয়া বা ঠোঁটের ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঘটে। শীতকালে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ঠোঁটের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে ঘরোয়া উপায়, পুষ্টিকর খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং সঠিক ত্বকচর্চা অপরিহার্য।
ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
ঠোঁট ফাটার অন্যতম কারণ হলো ভিটামিনের অভাব। ঠোঁট ফাটে বিশেষ করে ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) এবং ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন) এর ঘাটতির কারণে। এছাড়াও ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) এবং ভিটামিন বি১২ এর অভাবও ঠোঁট ফাটার কারণ হতে পারে। এই ভিটামিনগুলোর অভাবে ঠোঁটের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে ঠোঁট ফাটে এবং ঠোঁটের চামড়া খসখসে হয়ে উঠে যায়।
নিয়মিতভাবে সুষম খাবার খেতে হবে। যেমন শাকসবজি, দুধ, ডিম, মাছ এবং বাদাম জাতীয় খাবার খেলে এই ধরনের সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটার কারণ কি
অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়া এবং কিছু স্বাস্থ্যগত কারণের জন্য ঠোঁট ফেটে যায়। এর মধ্যে কয়েকটি কারণ গুলো উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- শুষ্ক আবহাওয়াঃ শীতকাল বা শুষ্ক পরিবেশে ঠোঁটের ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। যার ফলে ঠোঁট ফেটে যায়।
- পানির অভাবঃ শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যেতে পারে।
- ভিটামিনের ঘাটতিঃ বিশেষ করে ভিটামিন বি২, বি৩, বি৬, এবং বি১২ এর অভাবে ঠোঁট ফেটে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ঠোঁট চাটাঃ অনেক সময় ঠোঁট শুকিয়ে গেলে মানুষ স্বভাবগত ভাবে ঠোঁট চাটে, যার কারণে ঠোঁট আরও বেশি শুকিয়ে যায় এবং ঠোঁট ফাটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- আবহাওয়া পরিবর্তনঃ হঠাৎ করে তাপমাত্রার পরিবর্তন বা আর্দ্রতা কমে গেলে ঠোঁট ফেটে যেতে পারে।
- অ্যালার্জিঃ প্রসাধনী পণ্য, লিপ বাম, বা খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা ঠোঁটের ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ঠোঁট ফাটার কারণ হতে পারে।
- স্বাস্থ্য সমস্যাঃ ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, সোরিয়াসিস, এবং ইকজিমা ঠোঁট ফাটার কারণ হতে পারে।
- অপ্রয়োজনীয় লিপস্টিক বা লিপ বাম ব্যবহারঃ কিছু প্রসাধনী পণ্যে রাসায়নিক উপাদান থাকে যা ঠোঁটের আর্দ্রতা শুষে নেয়, ফলে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়।
- মেডিকেশন বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু ওষুধ যেমন রেটিনয়েড, কেমোথেরাপি ওষুধ ঠোঁট শুষ্ক করে ফেলে।
এই কারণগুলো নিয়মিতভাবে এড়িয়ে চলা বা যথাযথভাবে যত্ন নেওয়া ঠোঁট ফাটার সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। সঠিক যত্ন এবং পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টি গ্রহণ করলে এই সমস্যাগুলো কমানো সম্ভব হবে।
শীতকালে ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফেটে যায় কেন
শীতকালে ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফেটে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো শুষ্কতা। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায় এবং পরিবেশে শুষ্কতা বেড়ে যায়। এর ফলে ত্বক থেকে সহজে আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্প হারিয়ে যেতে শুরু করে। এর পাশাপাশি শীতের ঠান্ডা বাতাস এবং তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়া ত্বককে আরও শুষ্ক করে তোলে। কিছু নির্দিষ্ট কারণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- বাতাসের আর্দ্রতার অভাবঃ শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, যার ফলে ত্বক ও ঠোঁট থেকে পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। এই কারণে ঠোঁট ও ত্বক ফাটতে শুরু করে।
- বাড়তি তাপের ব্যবহারঃ শীতকালে ঘরে উষ্ণতা ধরে রাখার জন্য হিটার বা অন্যান্য গরম করার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা ঘরের বাতাসকে শুষ্ক করে তোলে। এই শুষ্কতা ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে।
- ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাসঃ শীতের সময়ে বাইরে ঠান্ডা বাতাস এবং তীব্র ঠান্ডার কারণে ত্বক ও ঠোঁটের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যায়। এতে ত্বক ফাটা এবং শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ঠোঁট বারবার চাটাঃ শীতকালে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে গেলে অনেকে বারবার ঠোঁট চাটেন, যা আরও শুষ্কতা সৃষ্টি করে এবং ঠোঁটের ত্বক ফাটিয়ে দেয়।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার বা লিপবাম ব্যবহার করা এবং ত্বকে লোশন বা ক্রিম মাখা ভালো উপায় হতে পারে। এ ছাড়া প্রচুর পানি পান করা এবং ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখাও উপকারী।
শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন
শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় ঠোঁটের শুষ্কতা ও ফাটল প্রতিরোধ করার জন্য। গ্লিসারিন একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শীতের সময় পরিবেশ শুষ্ক হয়ে যায়, যা ঠোঁটের ত্বক থেকে আর্দ্রতা হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়। গ্লিসারিন ব্যবহারের কয়েকটি প্রধান কারণ হলোঃ
- আর্দ্রতা ধরে রাখাঃ গ্লিসারিন ঠোঁটের ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে, ফলে ঠোঁট শুষ্ক হয় না এবং ফাটল কমে।
- ত্বক নরম রাখাঃ এটি ঠোঁটের ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে, যাতে ঠোঁট শীতের শুষ্ক বাতাসে খসখসে না হয়।
- শুষ্কতা প্রতিরোধ করাঃ গ্লিসারিন ত্বকের উপরে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা ঠোঁটকে শুষ্ক বাতাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
- ক্ষত নিরাময় করাঃ ঠোঁট ফেটে গেলে গ্লিসারিন দ্রুত নিরাময়ে সহায়ক, কারণ এটি ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজিং প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।
এই কারণে, শীতকালে ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজড এবং সুরক্ষিত রাখতে গ্লিসারিন একটি কার্যকর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি, যা ঠোঁটকে হাইড্রেটেড এবং স্বাস্থ্যকর রাখে।
শীতকালে ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়- সম্পর্কে বিস্তারিত
শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা, যা শুষ্ক আবহাওয়া, শীতল বাতাস এবং হিটার ব্যবহারের ফলে হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যায়। নিচে উল্লেখিত শীতকালে ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
গ্লিসারিন ও গোলাপজল
- গ্লিসারিন ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং গোলাপজল তাজা ভাব এনে দেয়।
- পদ্ধতিঃ সমান পরিমাণ গ্লিসারিন এবং গোলাপজল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। এটি রাতে ব্যবহার করলে উপকার বেশি হয়।
নারকেল তেল
- নারকেল তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
- পদ্ধতিঃ দিনে কয়েকবার ঠোঁটে নারকেল তেল লাগান, বিশেষ করে শোবার আগে।
মধু ও চিনি স্ক্রাব
- মধু ঠোঁটের জন্য ময়েশ্চার এবং চিনি এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে।
- পদ্ধতিঃ এক চামচ চিনি এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি মৃত ত্বক দূর করবে এবং ঠোঁটকে নরম করবে।
শসার রস
- শসার রস ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- পদ্ধতিঃ শসার টুকরো নিয়ে ঠোঁটে ঘষুন। এটি ঠোঁটকে সতেজ রাখবে এবং শুষ্কতা কমাবে।
দুধের সর
- দুধের সর প্রাকৃতিক ফ্যাট সমৃদ্ধ, যা ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করে।
- পদ্ধতিঃ দুধের সর ঠোঁটে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করবে।
অ্যালোভেরা জেল
- অ্যালোভেরা ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও ত্বককে সান্ত্বনা দিতে সাহায্য করে।
- পদ্ধতিঃ তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে ঠোঁটে লাগান। এটি ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে সহায়ক।
ঘি বা মাখন
- ঘি বা মাখন ঠোঁটকে স্যাঁতস্যাঁতে রাখতে সহায়ক।
- পদ্ধতিঃ রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে সামান্য ঘি বা মাখন লাগান।
পানি পান করা
- শীতকালে শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে, যা ঠোঁটকে শুষ্ক করে।
- পদ্ধতিঃ প্রচুর পানি পান করুন। এটা ঠোঁটকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং শুষ্কতা কমাবে।
লিপ বাম ব্যবহার
- পদ্ধতিঃ বাইরে যাওয়ার আগে এবং রাতে শোবার আগে লিপ বাম বা ভ্যাসলিন লাগান। লিপ বাম বা ভ্যাসলিন ব্যবহার ঠোঁটকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে।
পর্যাপ্ত পুষ্টি
- পদ্ধতিঃ ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন, যা ত্বকের জন্য উপকারী। সঠিক পুষ্টির অভাবেও ঠোঁট শুষ্ক হতে পারে।
এই ঘরোয়া উপায়গুলো শীতকালে ঠোঁট ফাটার সমস্যা কমাতে সহায়ক হবে। তবে, যদি সমস্যা চলতেই থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
লেখকের মন্তব্য
ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে শীতকালে, যখন পরিবেশের আর্দ্রতা কমে যায় এবং ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। এই সমস্যাটি অনেকের জন্যই অস্বস্তিকর এবং কষ্টদায়ক হতে পারে। ঠোঁটের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ার কারণে এটি সহজেই আর্দ্রতা হারায় এবং যত্নের অভাবে ফাটল দেখা দেয়। ঠোঁট ফাটার পেছনে বিভিন্ন কারণ যেমন—শুষ্ক আবহাওয়া, পর্যাপ্ত পানি না পান করা, পুষ্টির অভাব, এবং ঠোঁট চাটার অভ্যাস দায়ী হতে পারে।
ঠোঁট ফাটার সমস্যা এড়াতে প্রয়োজন যথাযথ যত্ন এবং সঠিক অভ্যাসের। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায়। একইসঙ্গে কিছু ঘরোয়া উপাদান যেমন—গ্লিসারিন, মধু, নারকেল তেল ইত্যাদির ব্যবহার ঠোঁটকে নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার মতামতটি কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং প্রয়োজনে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আরও যে কোনো তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখে আসতে পারেন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url