নতুন নিয়মে ই পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো দেখে নিন
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি জেনে নিনপ্রিয় পাঠক, নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি তা জানার জন্য অনেকে খোঁজা খোঁজি করে থাকেন কিন্তু সঠিক তথ্য পান না। এই আর্টিকেলটি ভালো করে পড়লে আপনি আপনার মনের মতো তথ্য পেতে সহায়তা করবে। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।
ই পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম এবং ই পাসপোর্ট কি এই সব বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। সকল তথ্য পাওয়ার জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বিদেশ যাওয়ার সর্ব প্রথম ধাপ হলো পাসপোর্ট। বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছে বলে মনে করা হয়। ই-পাসপোর্ট এর সকল তথ্য ইলেক্ট্রনিক চিপের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে, তাই নকল পাসপোর্ট করলে সাথে সাথে বাতিল বলে গণ্য হবে। বিদেশে কর্মসংস্থান এবং ভ্রমণ কারিদের যাত্রা সুরক্ষিত করার জন্য ই-পাসপোর্ট এর সুবিধা চালু হয়েছে। নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো সুন্দর ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় এবং ই পাসপোর্ট ফি- ই পাসপোর্ট করার নিয়ম সে সব তথ্য বিস্তারিত জানতে পারবেন। এই রকম আরও কিছু পয়েন্ট জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।
ই পাসপোর্ট কি
ই-পাসপোর্ট (e-Passport) হলো একটি আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তির পাসপোর্ট, যা একটি ইলেকট্রনিক পেনড্রাইভ এর মাধ্যমে পাসপোর্টকারির তথ্য সুরক্ষিত রাখে। এই পেনড্রাইভ পাসপোর্টকারির ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ছবি, এবং আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক তথ্য) সংরক্ষিত থাকে। ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং এর মাধ্যমে নিরাপদ ও দ্রুত পাসপোর্ট যাচাই সম্ভব হয়। এটি জালিয়াতি রোধ এবং ভ্রমণকারীদের সহজ ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ই পাসপোর্ট ফি- ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
আমরা অনেকে ই-পাসপোর্ট করার সঠিক নিয়ম এবং ই পাসপোর্ট ফি কত লাগে তা জানি না তবে আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সকল বিষয় তুলে ধরা হলো।
ই পাসপোর্ট ফি- বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট করতে খুব বেশি ফি লাগে না তবে আপনি যদি কোনো এজেন্ট বা দালাল এর খপ্পরে পড়েন সে ক্ষেত্রে টাকা বেশি লাগবেই। ই-পাসপোর্টের ফি ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদ এবং পৃষ্ঠার ওপর নির্ভর করে। দালাল ছাড়াই, কম ফি দিয়ে কিভাবে পাসপোর্ট করবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
৫ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট ফি- যদি কেউ ৫ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট করতে চান তবে দালাল ধরার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ পাসপোর্ট করতে ফি এর টাকা জমা দিতে হবে সরকারি কোনো ব্যাংকে। ৫ বছরের ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ই-পাসপোর্ট এর স্বাভাবিক ফি ৩,৪৫০ টাকা, জরুরী ফি ৫,৭৫০ টাকা এবং অত্যন্ত জরুরী ফি ৬,৯০০ টাকা। আবার যদি কেউ ৫ বছরের ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য ই-পাসপোর্ট করেন তার স্বাভাবিক ফি ৫,৭৫০ টাকা, জরুরী ফি ৬,৯০০ টাকা এবং অত্যন্ত জরুরী ফি ৮,০৫০ টাকা।
১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট ফি- যদি কেউ ১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট করতে চান তাহলে ১০ বছরের ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ই-পাসপোর্ট এর স্বাভাবিক ফি ৫,৭৫০ টাকা, জরুরী ফি ৮,৬২৫ টাকা। আবার যদি কেউ ১০ বছরের ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য ই-পাসপোর্ট করেন তার স্বাভাবিক ফি ৮,৬২৫ টাকা, জরুরী ফি ১১,৫০০ টাকা।
বর্তমানে এই ফি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই আবেদন করার আগে সর্বশেষ ফি নিশ্চিত করতে ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করুন।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম- বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
- প্রথমে ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইট এ গিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে।
- আবেদনপত্রটি সাবমিট করতে হবে এবং পেমেন্ট করতে হবে।
- আবেদন সম্পন্ন করার পর, আপনাকে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস বা নির্দিষ্ট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।
- এখানে আপনি আপনার ছবি, আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক), এবং স্বাক্ষর দিতে হবে এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য একটা স্লিপ পাবেন।
- বায়োমেট্রিক দেওয়ার পর, আপনার ই-পাসপোর্ট তৈরির জন্য নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন হবে।
- পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনি এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।
- এরপর পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট স্লিপ দেখিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
ই পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ। নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগে তার মধ্যে কিছু তথ্য এখানে দেওয়া হলো। এখানে ধাপে ধাপে ই-পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম দেওয়া হলো।
ধাপ ১: ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ
- প্রথমে ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন: www.epassport.gov.bd.
- ওয়েবসাইটে ঢুকে "Apply Online" বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ২: অ্যাকাউন্ট তৈরি ও লগইন
- নতুন অ্যাপ্লিকেশন করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। "Sign Up" বা "Create Account" অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন এবং লগইন করুন।
ধাপ ৩: আবেদন ফর্ম পূরণ
- লগইন করার পর, আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করুন।
- ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, জন্ম তারিখ, পিতামাতার নাম ইত্যাদি)
- পরিচয় তথ্য (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম সনদ ইত্যাদি)
- যোগাযোগের তথ্য (ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি)
- পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য (যদি আগের পাসপোর্ট থাকে)
ধাপ ৪: ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড
- নির্ধারিত ফরম্যাট অনুযায়ী আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং স্বাক্ষর আপলোড করুন।
ধাপ ৫: ফি প্রদান
- আবেদন জমা দেয়ার পর, পেমেন্ট সেকশনে গিয়ে অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করুন। পেমেন্ট করার জন্য বিভিন্ন বিকল্প (বিকাশ, রকেট, ব্যাংক ট্রান্সফার ইত্যাদি) থাকতে পারে।
ধাপ ৬: আবেদন প্রিন্ট
- সফলভাবে আবেদন জমা দেওয়ার পর, আবেদন ফর্মটি প্রিন্ট করে নিন। এটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করুন।
ধাপ ৭: নির্ধারিত কেন্দ্রে সাক্ষাৎকার
- ফর্ম জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় এবং কেন্দ্রে গিয়ে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি, ইত্যাদি) প্রদান করুন।
ধাপ ৮: পাসপোর্ট সংগ্রহ
- সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আপনার ফোনে বা ইমেইলে একটি নোটিফিকেশন আসবে। তখন নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আপনি সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ই পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো দেখে নিন।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ। বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।
- যদি আপনার আগে পুরাতন পাসপোর্ট মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) অথবা হাতে লেখা পাসপোর্ট থাকে, সেটি জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্টের অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করা আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি জমা দিতে হবে। ফরমটি ই-পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।
- ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার পর ব্যাংকের জমাদানের রশিদটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
- ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে গেলে আপনার বায়োমেট্রিক ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে, যা আবেদন প্রক্রিয়ার সময় সংগ্রহ করা হবে।
- বিশেষ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাগজপত্র যেমন বিবাহ সনদ (বিবাহিত হলে), কর্মসংস্থানের সনদ (সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী হলে), ছাত্র সনদ (ছাত্র হলে) এবং প্রত্যয়ন পত্র (বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন সরকারি সুযোগ সুবিধা নিতে হলে)।
- এই সকল কাগজপত্র নিয়ে কম্পিউটার এর দোকানে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় ২০২৪
পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী, সাধারণত পাসপোর্ট পাওয়ার সময়সীমা আবেদনকারীর ধরণের ওপর নির্ভর করে।
সাধারণ পাসপোর্টঃ সাধারণত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন কারণে এই সময়সীমা সামান্য বাড়তে বা কমতে পারে।
জরুরি পাসপোর্টঃ জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য সাধারণত ৭ কার্যদিবসের সময় লাগে। জরুরি পাসপোর্টের জন্য অতিরিক্ত ফি প্রযোজ্য হয়।
সুপার জরুরি পাসপোর্টঃ সবচেয়ে দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়ার পদ্ধতি, যেখানে সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়া হয়। তবে এই ক্ষেত্রে ফি সবচেয়ে বেশি লাগে।
এই সময়সীমাগুলো স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল এবং যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
নতুন নিয়মে ই-পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগে সব উল্লেখ করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম আনুসরন করে আবেদন করতে পারেন। কেউ আপনার কাছে জানতে চাইলে বলতে পারেন।
এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার উপকৃত হয় তাহলে আপনার মতামতটি কমেন্টে জানাবেন এবং প্রয়োজনে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আরও যে কোনো তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখে আসতে পারেন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url