ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো জেনে নিন

কিভাবে দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করা হয় জেনে নিনপ্রিয় পাঠক, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো কি কি তা জানার জন্য অনেকে খোঁজা খোঁজি করে থাকেন কিন্তু সঠিক তথ্য পান না। এই আর্টিকেলটি ভালো করে পড়লে আপনি আপনার মনের মতো তথ্য পেতে সহায়তা করবে। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো জেনে নিন

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে এবং ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই সব বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। সকল তথ্য পাওয়ার জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ভূমিকা

বর্তমানে আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই ডেঙ্গু মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয় সে কারণে এডিস মশা কামড়ানোর ফলে আক্রান্ত হয়ে যায়। তাই কিভাবে ডেঙ্গু মশার মোকাবিলা করবো সেসব বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ বং ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে এই সব বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। এডিস মশার কামড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সন্ধ্যার আগের ঘরের জানালা বন্ধ করে দিতে হবে এবং ঘুমানোর আগেই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার মূলত এডিস মশা থেকে ঘটে, বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস নামের প্রজাতির মশা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটায়। এই মশাগুলো ডেঙ্গু রোগ ছড়ায় এবং মানুষকে কামড়িয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত করে দেয়। ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

মশার কামড়ঃ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিকে যদি মশা কামড় দেয় তাহলে রক্তের সাথে ভাইরাসটি গ্রহণ করে নেয়।

ডেঙ্গু রোগের বিস্তারঃ মশার দেহে ভাইরাসটি কিছুদিন থেকে যায় এবং তা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করে।

সুস্থ মানুষকে কামড়ঃ ভাইরাস জনিত মশাটি এরপর অন্য কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ালে ভাইরাসটি সেই মানুষটির রক্তে প্রবেশ করে এবং তাকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত করে।

জলাবদ্ধতাঃ এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে, যেমন বৃষ্টির পানি জমে থাকা কোনো গর্ত বা জায়গা, ফুলের টবে, পুরানো টায়ারের ভিতরে পানি জমে থাকা, এই সমস্ত জায়গায় মশার বংশ বিস্তার করে।

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবঃ বাড়ি বা আশপাশের এলাকা অপরিষ্কার থাকলে এবং পানির সঠিক নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে মশার বংশ বিস্তার বৃদ্ধি পাবে।

আবহাওয়াঃ গরম ও আদ্র আবহাওয়ায় এডিস মশার বিস্তার খুব তাড়াতাড়ি ঘটতে পারে।
 
ডেঙ্গুর বিস্তার প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেমন জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে, মশার বংশ বিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মশারির ব্যবহার করতে হবে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ

ডেঙ্গু রোগের কারণ হলো ডেঙ্গু ভাইরাস। এই ভাইরাসটি এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। যখন এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন মশাটি ভাইরাসটি বহন করে এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করে, ফলে ডেঙ্গু রোগ হয়।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো জেনে নিন

স্থির পানি জমে থাকা স্থান, যেমন পুরানো টায়ার, ফুলের টব, এবং খোলা পানির পাত্র, মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। যেখানে জলাবদ্ধতা এবং অপরিষ্কার পরিবেশ আছে, সেখানে মশার প্রজনন ও বিস্তার বাড়ে, যা ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গরম ও আদ্র আবহাওয়া মশার বংশবৃদ্ধি ও ভাইরাসের বিস্তারকে ত্বরান্বিত করে।

মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা, যেমন মশারি ব্যবহার করা। বাড়ি এবং আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখা এবং জলাবদ্ধতা দূর করা। মশার বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন স্থির পানির উৎস ধ্বংস করা বা ঢেকে রাখা।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে? ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত এক লগারে হতে পারে। তবে, পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো শুরু হয় সাধারণত ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এবং এর মধ্যে উচ্চমাত্রার জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব, এবং ত্বকের র‌্যাশ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

যদিও ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন রক্তক্ষরণ, প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া, বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF)। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলোঃ

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণঃ সাধারণত ৪-৭ দিনের জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর লেগে থাকে। কোনো ভাবে ওষুধ খেয়ে জ্বর কমে না। মাংস পেশিতে প্রচণ্ড ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করে। ত্বকে র‍্যাশ বা লালচে দাগ দেখা দিতে পারে। খাবারের প্রতি অরুচি ভাব হতে পারে। ঘন ঘন বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। শরীরের প্রতি ক্লান্ত অনুভব করা।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারঃ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে। পানি অথবা ইলেকট্রোলাইট সল্যুশন খাওয়া উচিত, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। অ্যাসপিরিন এবং NSAIDs এসব ওষুধ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে তাই এগুলো খাওয়া উচিত হবে না। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুরুতর হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মশার কামড় থেকে সুরক্ষা পেতে মশা প্রতিরোধী ক্রিম ব্যবহার করতে হবে এবং বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করে রাখতে হবে। বাড়ির আশপাশে কোনো ধরনের পানি জমে থাকে দেওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুসরণ করা করতে হবে এবং মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বর হলে কিছু খাবার আছে যা খেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থতা বাড়িরে তোলে। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে সেসব খাবার আমাদের সকলেরই জানা উচিত। একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে সেসব বিষয়ে এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলোঃ

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো জেনে নিন

পর্যাপ্ত পানি ও তরলঃ শরীরের জলীয় অংশ বজায় রাখতে প্রচুর পানি পান করতে হবে, যেমন নারকেলের পানি, এবং স্যুপ পান করতে হবে। এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারঃ ডেঙ্গু রোগ হলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খাবার খেতে হবে। যেমন পেঁপে, কমলা, স্ট্রবেরি, এবং কিউই জাতীয় ফল ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। এটি ইমিউন কোষ গুলোকে শক্তিশালী করে তোলে।

হালকা খাবারঃ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সক্ত খাবার খাওয়া উচিত হবে না তাই রোগীকে হালকা খাবার দিতে হবে, যেমন সুজি, খিচুড়ি, পটেটো, এবং ভাত যেমন আলো চাউলের খিচুরি ভাত খাওয়াতে হবে। এই সব খাবার গুলো পাকস্থলীর উপর কম চাপ ফেলে।
ফল ও সবজিঃ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে পুষ্টিকর ফল ও সবজি খাওয়াতে হবে, যেমন গাজর, পালং শাক, বেগুন, লালশাক, স্ট্রবেরি এবং কিউই ফল ইত্যাদি এসব খাবার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুনঃ খুব মসলাযুক্ত, তেলেভাজা বা ভারী খাবার খাওয়া যাবে না কারণ এসব মসলা যুক্ত খাবার খেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির পাকস্থলীর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

অতিরিক্ত চিনি ও লবণঃ ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অতিরিক্ত চিনি ও লবণ খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে, তবে স্বাভাবিক পরিমাণে খাওয়া যাবে। যদি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো বেশি গুরুতর হয়ে যায় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো কি কি তা ইতি মধ্যে আপনাদের মাঝে প্রকাশ করেছি। দিন দিন ডেঙ্গু রোগের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তাই পরিবারকে ডেঙ্গু মশার হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আপনার। ডেঙ্গু মোকাবিলায় কি করতে হবে তা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নিয়েছেন। তাই আপনি এবং আপনার পরিবারকে সতর্ক করে থাকবেন। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে কোনো জায়গায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না।

এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার মতামতটি কমেন্টে জানাবেন এবং প্রয়োজনে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আরও যে কোনো তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখে আসতে পারেন। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url