নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনারা নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত অনেকে জানেন না, জানার জন্য হয়তো অনেকে খোঁজা খোঁজি করে থাকেন কিন্তু আপনাদের মনের মতো তথ্য পান না। তাই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।
তাছাড়া নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম ও নিম পাতার ব্যবহৃত অংশ গুলো কি কি তা জানতে পারবেন এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে। তাই আর্টিকেলটি ভালো করে পড়বেন।

ভূমিকা

নিমগাছ পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশ দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা করে থাকে। নিমগাছ বাড়ির আঙ্গিনায় থাকলে গৃহপালিত পশুর অসুখ-বিসুখ কম হয়। নিমগাছের পাতাও অনেক উপকারি এবং নিম পাতা ব্যবহার করে অনেক কাজে লাগানো যায়। নিম পাতা দিয়ে চুলের যত্ন, দাউদ ভালো হয়ে যায়।

এছাড়াও নিম পাতা দিয়ে গোসল করলে চুলকানির সমস্যা ভালো হয়ে যায়। নিম পাতা ব্যবহার করে মুখের ব্রণ ভালো হয়ে ফর্সা ত্বক ফিরিয়ে আনে। নিম পাতা ব্যবহার করে এলার্জির সমস্যা দূর করা যায়। নিচে নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

নিম পাতা

আমরা সকলেই নিমগাছ দেখেছি এবং গাছটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। আমরা সকলেই জানি, নিমগাছ অনেক উপকারি একটি বৃক্ষ, যা মানব জাঁতির জন্য খুবই উপকারি একটি গাছ। পরিবেশ দূষিত হওয়া থেকে নিমগাছ পরিবেশ রক্ষা করে। নিমগাছ যেমন উপকারি তেমন নিমগাছের উপকারি আরেকটি অংশ নিম পাতা। তাছাড়া নিমগাছের নিম ফল এর বীজ ও অনেক উপকার।

নিম পাতা দিয়ে ওষুধ এর কাজে লাগানো হয়। শরীরে চুলকানি, ঘামাচি, পোঁচড়া হয় সে ক্ষেত্রে নিম পাতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া অনেকে রূপচর্চারও কাজে নিম পাতা ব্যবহার করে। নিম পাতা দিয়ে গোসল করলে শরীরে জমে থাকা জীবাণু দূর করে। নিম পাতার রস খেলে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। এছাড়াও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকে নিম পাতা চিবিয়ে খেয়ে থাকে। মাথার উকুন মারার জন্য নিম পাতা অনেক উপকারি, এতে করে মাথার উকুনও দূর হয়ে যায়।

নিম পাতার গোত্র

নিমগাছ বহুবর্ষজীবী ঔষুধি একটি বৃক্ষ। নিম পাতারও অনেক ঔষুধি গুণ রয়েছে। নিমগাছের যেমন গোত্র রয়েছে তেমনি নিম পাতার ও জাঁত/গোত্র রয়েছে যেমন দেশিও নিম পাতা আর গুঢ়া নিম পাতা। গুঢ়া নিম পাতার থেকে দেশিও নিম পাতার গুরুত্ব অনেকটাই বেশি। দেশিও নিম পাতা অনেক তেঁতো আর গুঢ়া নিম পাতা কিছুটা তেঁতো কম থাকায় তৃণভোজী প্রাণী গুঢ়া নিম পাতা খেতে পারে।

নিম পাতার গোত্রের মধ্যে দেশিও নিম পাতার উপকার অনেক বেশি গুঢ়া নিম পাতারও কিছুটা উপকার রয়েছে, তবে রোগ ব্যাধি নিরাময়ের জন্য দেশিও নিম পাতা অনেকে কাজে লাগাই। নিম পাতা ছাড়া নিম গাছের ডাল, শিকড় এবং নিমগাছের বাকল ও অনেক কাজে লাগাই।

নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

নিমগাছ ও নিম পাতা অনেক উপকারি। প্রাচীনকালের মানুষের যখন রোগ বালায় হতো তখন নিম পাতার ওষুধ বানিয়ে সেবন করলে রোগ নিরাময় থেকে বাঁচা যেতো। প্রাচীনকালের মানুষের রোগ ব্যাধি ভালো হতো নিম পাতা দিয়ে, কিছু কিছু বিজ্ঞানী নিম পাতা নিয়ে গবেষণা করে একটি সূত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই সূত্রটি হলো নিম গাছ থেকে নিম পাতা পর্যন্ত এমন কি নিম গাছের প্রত্যেক অংশ অনেক হারে তেঁতো।

নিমগাছের প্রত্যেক অংশ তেঁতো হওয়ার কারণে বৈজ্ঞানিক নামকরন দিয়েছিলেন। নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম Azadirachta indica।

নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার

নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার অপরিসীম। নিম পাতা ব্যবহার করে অনেকে দৈনন্দিন কাজে লাগিয়ে থাকে। নিম পাতার কি গুনাগুণ রয়েছে, নিম পাতার কি কি উপকারিতা ও কি কি কাজে নিম পাতা ব্যবহার করা হয় তা বিস্তারিত নিচে জেনে নিন।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতাঃ যাদের কৃমি জাতীয় সমস্যা হয়ে থাকে তারা নিম পাতার রস খেলে তাদের কৃমি জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়। ১০-১২ টা সতেজ নিম পাতা সংগ্রহ করে রাতের সময় এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। নিম পাতা ভিজিয়ে রাখা পানি ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কৃমি ধ্বংস হয়ে যায় এবং পাশাপাশি খাবারের অরুচিহীনতা সমস্যা দূর করে দেয়। খাবারের প্রতি অরুচি থাকলে বা কৃমির সমস্যায় ভুগলে নিম পাতার রস সপ্তাহে ২-৩ দিন উচিত।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহারঃ বর্তমানে অনেকের শরীরে জীবাণু থাকার কারণে অনেকে চুলকানি রোগে ভুগেন। চুলকানি দমনের জন্য অনেক রকমের ওষুধ মলম দিয়ে ও চুলকানি ভালো হয় না তারা এক বার নিম পাতা দিয়ে গোসল করে দেখবেন চুলকানি ভালো হয় কি না। চুলকানি সাধারণত শরীরে জমে থাকা জীবাণু থেকে হয়, চুলকানি হলে বা চুলকানি যেন না হয় তার জন্য নিম পাতা দিয়ে সপ্তাহে ২ দিন গোসল করলে চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহারঃ চর্মরোগ একটি ছোঁয়াচে রোগ, এক জনের থেকে আরেক জনকে আক্রান্ত করতে পারে তাই এই রোগটিকে মারাত্মক রোগ বলা হয়ে থাকে। চর্মরোগ সাধারণত ময়লা জনিত জামাকাপড় পরিধান করলে হয়ে থাকে তাছাড়া আর্সেনিক যুক্ত টিউবলের পানিতে এবং পচা পানিতে সংস্পর্শ হওয়ার কারণে চর্মরোগ হয়ে থাকে। চর্মরোগ হলে নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে শরীরে ব্যবহার করলে চর্মরোগের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহারঃ যাদের এলার্জি আছে তাদের জন্য নিম পাতা অনেক উপকারি। কিছু কিছু খাবার রয়েছে যে সব খাবার খেলে এলার্জি সৃষ্টি হয়। কিন্তু খাবারের স্বাদ এর জন্য খেয়ে ফেলি তাতে এলার্জি হয়ে যায়। এলার্জি দমনের জন্য ওষুধ কিনে নিলে ভালো হয়ে যায়। তবে সে সময়ে যদি ওষুধ না পান তাহলে নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে এলার্জি জনিত স্থানে লাগিয়ে নিবেন তাহলে ভালো হয়ে যাবে।

চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহারঃ আমরা কে না চুলের যত্ন নিতে ভালবাসি না, আমরা সকলেই চুলের যত্ন অনেক উপায়ে নিয়ে থাকি। তবে চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার আমরা অনেক কম নিয়ে থাকি কারণ নিম পাতা ব্যবহার করে যে চুলের যত্ন নেওয়া যায় তা অনেকেরি অজানা। নিম পাতা ভালো করে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিয়ে নিম পাতার পেস্ট মাথা থেকে চুল পর্যন্ত যদি ব্যবহার করি তাহলে মাথার খুকশি দূর হয় এবং চুল ঘন কালো হয়ে যায় চুল দেখাই মসৃণ এর মতো।

তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহারঃ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আমরা অনেক ফেসওয়াশ, ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। ফেসওয়াশ ও ক্রিম ব্যবহার করে তৈলাক্ত ভাব শুধু ২৪ ঘণ্টা দূর করা যায় কিন্তু নিম পাতা ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব একেবারেই দূর করা যায়। তার জন্য নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত নিম পাতার পেস্ট ত্বকে লাগানোর ফলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বককে করে তুলে নমনীয় ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।

মুখে নিম পাতার ব্যবহারঃ অনেকে জানেন না মুখে নিম পাতা ব্যবহার করলে কি হয়। নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ এর সমস্যা দূর করে দেয় সাথে ফেস ফর্সা হয়ে যায়। যারা ব্রণ নিয়ে ভুগছেন ক্রিম ব্যবহার করেও ভালো হয় না এবং ফর্সা হওয়ার জন্যেও অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু সেই প্রয়োগ ফেল হয়ে যায় তারা নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

দাউদে নিম পাতার ব্যবহারঃ দাউদ একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগটি ছোঁয়াচে রোগ। শরীরে ময়লা জমে থাকার কারণে সাধারণত দাউদ হয়ে থাকে। দাউদ ছোট জায়গা নিয়ে হয় আসতে আসতে বড় জায়গা দখল করে। অনেকে দাউদ ভালো করার জন্যে অনেক ওষুধ খেয়েছেন অনেক মলম ব্যবহার করেছেন কিন্তু কোনো ভাবে দাউদ ভালো হয় না। দাউদ ভালো করার জন্য নিম পাতা অনেক উপকারি।

দাউদ জনিত স্থানে কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে নিয়ে ক্ষত স্থানে নিম পাতার তৈরি কৃত পেস্ট লাগাতে হবে। সকালে আর রাতে প্রতিদিন একি নিয়মে ব্যবহার করতে হবে এবং পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভালো ওষুধ খাবেন তাহলে আসতে আসতে ভালো হয়ে যাবে।

নিম পাতার ব্যবহৃত অংশ

নিম পাতার অনেক অংশ আছে যা প্রত্যেকটাই অংশ ব্যবহৃত হয় যেমন নিমের শিকল/জড়, নিম ফল, পাতা। নিম পাতা দিয়ে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করা যায়। প্রাচীন কাল এর আয়ুর্বেদিক ওষুধ এর জন্য নিম গাছের সকল অংশ ব্যবহার করে অনেক রোগ ব্যাধি ভালো করেছেন। তাই নিম গাছের সকল অংশ নষ্ট না করে উপকারের জন্য ব্যবহার করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে অনেক তথ্য আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করেছি। নিম পাতার অনেক গুনাগুণ ও নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে অনেক কিছু তথ্য লিখেছি। আসা করি সঠিক তথ্য পেয়ে আপনাদের উপকার হবে।

এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তবে আপনার মতামতটি কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং প্রয়োজনে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আরও যে কোনো তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখে আসতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url