জমিতে বিটরুট চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জেনে নিন
জমিতে বিটরুট চাষ পদ্ধতি অনেকে অনেক জায়গাই খুঁজেছেন তবে আপনার মনের মতো খুঁজে পান নি। অল্প খরচে বেশি লাভমান হতে চাইলে ভালো ভাবে পুরো লেখাটি পড়ুন।
এছাড়া বিটরুট চাষের সময় কখন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে নিচের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বিটরুট সবজি খুবই উপকারী। বাংলাদেশে কয়েকটি জেলায় বিটরুট চাষ করা হয়। অল্প খরেছে বেশি লাভজনকময় একটি চাষাবাদ। জমিতে বিটরুট চাষ পদ্ধতি বিষয়ে অনেকে না জানার কারণে বিট চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে তাছাড়া বিটরুট বীজ এর জাত সম্পর্কে বলা হয়েছে। আরও কিছু পয়েন্ট লেখা আছে যা জানা খুবই প্রয়োজন।
বিটরুট বীজ
বিটরুট আমাদের দেশে খুব একটা পরিচিত না, তবে বিটরুট আমাদের দেশে চাষ করা হয়। এটি মূলত রবি মৌসুমে চাষ করা হয়। বিটরুট বীজ এর বেশ কয়েক ধরনের বীজ রয়েছে সে বীজ গুলোর মধ্যে বিশেষ জাঁত আছে যা আপনাদের কাছে তুলে ধরবো। বিটরুট বীজ এর বিশেষ জাঁত গুলোর নাম নিম্নে উল্লেখিত করা হলোঃ
- লালটু হাইব্রিড বিটরুট
- F1 হাইব্রিড
লালটু হাইব্রিড বিটরুটঃ লালটু হাইব্রিড বিটরুট জাঁতের বীজটি উচ্চ ফলনশীল একটি হাইব্রিড জাঁতের বিট। বীজটি খুব তাড়াতাড়ি করে ফলে যায়। বিটের আকার গ্লোব ও লাল বর্ণের হয়ে যায়। এই জাঁতের বিটের রোগ প্রতিরোধী বেশি। কম খরচে বেশি লাভ জনক হওয়া যায়।
F1 হাইব্রিডঃ F1 হাইব্রিড বিটের জাঁতটি ও অধিক ফলনশীল একটি হাইব্রিড জাঁত। এই জাঁতের বিটরুট দেখতে খুব আকর্ষণীও গাঁড়ও লাল রঙ্গের হয়ে থাকাই কৃষকের খুব পছন্দের একটি জাঁত। এই জাঁতটি ভাইরাস সহনশীল হওয়াই এটি অন্যতম একটি জাঁত। F1 হাইব্রিড বিটের জাঁতটি পাতা খাড়া হয়ে থাকে ফলে জমিতে অল্প জায়গাই বেশি ফলন হয়ে লাভ জনক হয়।
এই জাঁতের বিট গোলাকার ও লাল বর্ণের হওয়াই দেখতে খুব চমৎকার লাগে। এই জাঁতের বিটের ত্বক মসৃণ ও ত্বক থেকে কোনো শিকড় বের হয় না। এই জাঁতের বিট খেতে খুব মিষ্টি এবং অনেক সুস্বাদু একটি সবজি। এই জাঁতের বিট খেলে হার্ট ও কান্সারের রোগ প্রতিরোধ করে এবং ওষুধি কাজে লাগে।
বিটরুট বীজ কোথায় পাওয়া যায়
আমরা অনেকে আছি যারা বিটরুট চাষ করবো ভেবে বীজ কোথায় পাবো সেটা ভাবি। তবে এই আধুনিক যুগে আসে এই চিন্তা করাটাও বকামি। বিটরুট বীজ হাঁটে বাজারে পাওয়া যাই তবে সেখানে ও যদি খুঁজে না পান তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সার্চ করে কিনতে পারবেন। বিটরুট এর বীজ দারাজ থেকে ও অর্ডার করে পেতে পারেন। তাছাড়া গুগলে অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা বীটের বীজ বিক্রি করে সেখান থেকে নিতে পারেন।
বিটরুট চাষের সময়
আমাদের দেশে কিছু কিছু জেলায় বিটরুট এর চাষাবাদ হয়। বিটরুট এর চাষ এ স্বল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়াই অনেকে বিট চাষে আগ্রহী হতে পারেন এখন বিষয় হলো বিটরুট চাষের সময় কখন তা জানা নেই। বিটরুট এর বীজ বপন করে আগস্ট মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত। বিটের চাষাবাদ হালকা ঠাণ্ডা ও আদ্র আবহাওয়ায় বিট চাষ উপযোগী।
তবে বিট চাষে পরিমাণ মতো সূর্যের আলো পেতে হবে। তাই বীজ বপনের পর অক্টোবর মাসে বিট লাগাতে হবে। তাই আগস্ট মাসেই বীজ বপন করে জমি প্রস্তুত করে রাখতে হবে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত বিট চাষের পারফেক্ট সময়।
জমিতে বিটরুট চাষ পদ্ধতি
বিটরুট মূলত শীতকালীন সবজি তাই বিটের চাষ হালকা ঠাণ্ডা মৌসুমে চাষাবাদ করা হয়। এই সবজি স্বল্প খরচে বেশি লাভজনক। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয় বিটের দাম ভালো থাকায় খরচ বাবদ প্রতি বিঘা ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ জনক হয়ে থাকে। একটা বিটের গড় ওজন ২০০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। বিটরুট সবজি অনেক উপকারী একটি সবজি। জমিতে বিটরুট চাষ পদ্ধতি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
বিটরুট বীজ বপনের পর থেকে শুরু হয় বিটের পরিচর্যা। কীটনাশক বা কোনো প্রকার বিষ প্রয়োগ করা হয় না ফলে উৎপাদন খরচ ও কম হয়। অক্টোবর মাসে বিটরুট এর বীজ বপন করতে হবে সাথে জমি ভালো ভাবে জমি প্রস্তুত করে নিতে হবে। বিটরুট এর বীজ বপন করার জন্য ২০ সেন্টিমিটার উঁচু করে বেড করে সেখানে পরিমাণ মতো জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
তার আগে বিটের বীজ গুলো পানিতে ২০ মিনিট মতো ভিজিয়ে নরম করে নিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে তার উপর মাটি ছিটিয়ে দিতে হবে। এক সপ্তাহ পড় বীজ থেকে চারা দেখা যাবে বিট এর চারা লাগানোর মতো গাছ হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে তুলে নিয়ে জমিতে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
তার আগে জমিতে জৈব সার জিপ্সাম ইউরিয়া দস্তা টিএসপি সার সমান করে প্রয়োগ করে ৪ টা চাষ করে মই দিয়ে সমতল এবং মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। নালার মাটি তুলে ২০ সেন্টিমিটার উঁচু করে বেড তুলতে হবে সেই বেডে সারি সারি করে এক হাত জায়গার মধ্যে ২ থেকে ৩ টা করে বিটের চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে এবং পানি নিষ্কাসনের বাবস্থা করতে হবে।
বিটরুট এর চারা প্রতিস্থাপনের পর থেকে ৯০ দিন থেকে ১০০ দিন পর্যন্ত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। চারা গাছ থেকে যখন ছোট করে বিট এর দেখা দিবে তখন জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। বিটরুট এর চারা লাগানোর পর থেকে বিট তুলা পর্যন্ত ৫ থেকে ৬টি পানি সেচ দিতে হবে। বিটরুট এর গাছ বড় হওয়ার পর দেখতে হবে যে বিটের পাতা ছিদ্র করে দিচ্ছে কি না। পোকাতে পাতা ছিদ্র করে দিলে বিষ প্রয়োগ করতে হবে। এবং বিট যেন ফেটে না যাই। এভাবেই বিট এর ফলন ভালো হয়।
বিটরুট লাগানোর সময়
বিটরুট লাগানোর সময় হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস এর মধ্যে বাংলা কার্ত্তিক মাসে উত্তম সময়। বিটের চাষাবাদ হালকা ঠাণ্ডা ও আদ্র আবহাওয়ায় বিট চাষ উপযোগী। তাই বীজ বপনের পর অক্টোবর মাসে বিট লাগাতে হবে। তাই আগস্ট মাসেই বীজ বপন করে জমি প্রস্তুত করে রাখতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
আমাদের দেশের কিছু কিছু জেলায় বিটরুট এর চাষাবাদ রয়েছে। অনেকেই বিট চাষ করে লাভমান হওয়ার পর অনেকেই বিটরুট চাষ করতে চাই, আমি জমিতে বিটরুট চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছি সে অনুযায়ী করলে বেশি লাভমান হবেন আসা করি।
এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তবে আপনার মতামতটি কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং প্রয়োজনে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আরও যে কোনো তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখে আসতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url