সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি জেনে নিন
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি এবং কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে এই বিষয়ে হয়তো অনেকে জানেন না। আপনাদেরকে জানাবো এই ১১টি পদ্ধতি অনুযায়ী পার করলে কোরিয়া যাওয়া যায়। আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়লে উপকৃত হবেন।
কোরিয়া যাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা কত পর্যন্ত লাগে এই সব বিষয়ে জানানো হয়েছে। ভালোভাবে লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ভূমিকা
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, দক্ষিণ কোরিয়া চাকরির জন্য কোনো নিশ্চয়তা দেই না। স্বল্প খরচে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য আমদেরকে ১১ টি পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া শুধু ইপিএসের মাধ্যমেই যাওয়া সম্ভব। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বাংলাদেশের সরকারের সাথে কর্মী নিয়োগের জন্য শ্রম চুক্তি হয়।দক্ষিণ কোরিয়ার মাসিক বেতন কত সে সব বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইপিএস কি
Eps এর পূর্ণরূপ হলো Employment permit system। দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস এইচ আর ডি মন্ত্রণালয় বিদেশী কর্মী নেওয়ার এই পদ্ধতিকে ইপিএস বলে থাকে। ২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশের শ্রমচুক্তি করা হয়েছিলো ২০৫০ সাল পর্যন্ত। ১৬টি দেশের মধ্যে এই শ্রমচুক্তি হয়েছিলো বর্তমানে আরও ২টি দেশ যোগ হয়ে ১৮টি দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া হবে।
২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের কার্যক্রম চলতেই আছে।বাংলাদেশের বয়েসেল/প্রবাসী কল্যাণ ভবন এই মন্ত্রলায়টি মূলত ইপিএস এর মাধ্যমে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সিস্টেমটি চালু করেছে ২০০৭ সাল থেকেই। ইপিএস সিস্টেম ছাড়া কেউ অবৈধ ভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারবে না।
কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে
আমাদের প্রতিটা মানুষের একটি করে স্বপ্নের দেশ থাকে সে দেশে যাওয়ার জন্য কত টাকা লাগবে সেটাও বুঝতে পারি না। অনেকের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া ও একটি স্বপ্নের দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে সেটাও জানেন না। দক্ষিণ কোরিয়া ২ ভাবে যাওয়া যায় যেমন সরকারিভাবে কাজের উদ্দেশ্যে ও টুরিস্ট ভিসায়ও যাওয়া যায়। সরকারিভাবে কোরিয়া যেতে স্বল্প খরচে যাওয়া যায় ও টুরিস্ট ভিসায় গেলে খরচ বেশি পরে যায়।
সরকারিভাবে কোরিয়া যেতে অনেক সময় লাগতে পারে আর টুরিস্ট ভিসায় যেতে বেশি সময় লাগে না। কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে সে বিষয়ে তুলে ধরা হলো সরকারিভাবে কোরিয়া যেতে ফুলফিল ভাবে ৩ লাখ টাকাই যাওয়া সম্ভব। টুরিস্ট ভিসায় কোরিয়া যেতে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ পরে যাবে। টুরিস্ট ভিসায় কোরিয়া যেতে হলে আপনার পাসপোর্টে ৫ টি দেশের ভ্রমণ করেছেন এমন প্রমাণ দেখাতে হবে তাছাড়া যাওয়া সম্ভব না।
কোরিয়া যাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা
আমরা অনেকেই দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চাই কোরিয়া যাওয়ার জন্য কি কি শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে তা অনেকেই জানি না। তাই সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি কি প্রয়োজন তা জেনে নেওয়া যাক।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন সমমান এসএসসি পাস হতে হবে বা তারও বেশি হলে সমস্যা নেই।
- বয়স ১৮ থেকে ৩৯ বছর এর মধ্যে হতে হবে।
- বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। কোনো মামলা মকাদ্দমা থাকা যাবে না।
- কোরিয়া ভাষা জানা, বোঝা ও লেখা জানতে হবে।
- চোখের কালার ব্লাইন্ড সমস্যা থাকা যাবে না।
- মাদকাসক্ত হয়ে থাকলে বাতিল বলে গণ্য করা হবে।
- অবৈধ ভাবে কোরিয়াতে অবস্থানরত হন নি।
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি সমূহ গুলোর বিষয়ে জানতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার অনেকের স্বপ্ন আছে। কোরিয়াতে গিয়ে চাকরি করে টাকা উপার্জন করতে অনেকেই চাই। তবে সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার জন্য কি কি ধাপ পার করতে হবে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হল।
- কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন।
- লটারি ও ভাষা পারদর্শিতা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন।
- লটারি ও ভাষা পারদর্শিতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ।
- স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণ।
- মেডিকেল পরীক্ষাই উত্তীর্ণ।
- জব অ্যাপ্লিকেশন প্রেরণ ও রোস্টার অনুমোদন।
- এমপ্লয়মেন্ট পারমিট ইস্যু।
- ভিসা ইস্যু।
- ট্রেনিং।
- ফ্লাইট।
- দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ।
কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা অর্জনঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি প্রথম ধাপ। আপনি কোরিয়ান ভাষায় কোথা বলতে পারেন ও বুঝতে পারেন এমন ভাবে কোরিয়ান ভাষা ভালোভাবে শিখে ভাষার প্রতি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কোরিয়ান ভাষার প্রতি দক্ষতা অর্জন করতে চাইলে ভালোভাবে কোরিয়ান ভাষা পড়াশোনা করতে হবে।
লটারি ও ভাষা পারদর্শিতা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি দ্বিতীয় ধাপ। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ভবন/বোয়েসেল এর মাধ্যমে কোরিয়ান ভাষার প্রতি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদন দিয়ে থাকে। বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এর মধ্যে মূলত লটারি ও ভাষা পারদর্শিতা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। এই রেজিস্ট্রেশন অনেকে করতে পারে আবার অনেকে ব্যর্থ হয়। রেজিস্ট্রেশনের সময় সার্ভারের অনেক সমস্যা হতে পারে।
লটারি ও ভাষা পারদর্শিতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি তৃতীয় ধাপ। লটারিতে নাম আসলে বা ভাষা পারদর্শিতা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে সফল হওয়ার পর প্রবেশ পত্র তুলে নিতে হবে। পরীক্ষার তারিখ দেওয়ার পর পরীক্ষা দিতে হয়। এটি ২০০ মার্কের একটি পরীক্ষা, MCQ প্রশ্ন ৪০টি। এই পরীক্ষায় পাস করতে পারলে পরবর্তী ধাপ গুলোই যেতে পারবেন, তাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা আবশ্যক।
স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি চতুর্থ ধাপ। লটারি পরীক্ষা বা ভাষা পারদর্শী পরীক্ষায় পাস করার পর স্কিল টেস্ট পরীক্ষা হবে। এটি মূলত শারীরিক ফিটনেস এর সক্ষমতার পরীক্ষা নিবে সাথে ভাইবার মতো করে কোরিয়ান ভাষায় কিছু প্রশ্ন করবে। ওজন, উচ্চতা কোনো সমস্যা নেই কিন্তু চোখের কালার ব্লাইন্ড সমস্যা থাকলে বাদ পরে যাবেন।
মেডিকেল পরীক্ষাই উত্তীর্ণঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি পঞ্চম ধাপ। স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণ হবার পর মেডিকেল পরীক্ষা করতে হবে। নিজ নিজ জেলা ভিত্তিক মূলত মেডিকেল টেস্ট করতে হয়। মেডিকেল টেস্টে বড় কোনো রোগ ধরা পরলে বাতিল হয়ে যাবে, এইচ আই ভি রোগ হয়ে থাকলেও বাতিল হয়ে যাবে। মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট সব ভালো থাকতে হবে। মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী মেডিকেল ফরম পূরণ করে অফিসে জমা দিতে হবে।
জব অ্যাপ্লিকেশন প্রেরণ ও রোস্টার অনুমোদনঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি ষষ্ঠ ধাপ। সব ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর Eps ওয়েবসাইটে Eps ID একাউন্ট করতে করে লগইন করে দেখতে পারবেন আপনি কোন অবস্থানে রয়েছে তা দেখতে পারবেন। ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর সে গুলো প্রেরণ করবে তারপর রোস্টার হলো কি না তা দেখতে পাবেন। রোস্টারের মেয়াদ সর্বচ্চ ২ বছর তাই অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এমপ্লয়মেন্ট পারমিট ইস্যুঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি সপ্তম ধাপ। এমপ্লয়মেন্ট পারমিট ইস্যু মূলত কোন কোম্পানির মালিক কর্মী নিয়োগ নিয়েছে সেটি দেখায়। এমপ্লয়মেন্ট পারমিট ইস্যু হয়েও ক্যানসেল হয়েও যায় তাই নিরাশ হবেন না পরবর্তীতে শিওর হয়ে যাবে।
ভিসা ইস্যুঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি অষ্টম ধাপ। এমপ্লয়মেন্ট পারমিট ইস্যু হওয়ার পর সেটা এজেন্সি প্রেরণ করবে তারপর ভিসা ইস্যু মানে সিসিআইভি ইস্যু হয়ে গেলে আপনি কোরিয়া যেতে পারবেন। ভিসা ইস্যু হওয়ার পর যক্ষ্মা টেস্ট রিপোর্ট সাথে পুলিস ক্লিয়ারেন্স এর সনদ জমা দিতে হবে।
ট্রেনিংঃ কোরিয়া যাওয়ার জন্য এটি নবম ধাপ। সিসিআইভি ইস্যু হওয়ার পর ট্রেনিং এর জন্য ডাকবে বোয়েসেল। ট্রেনিং মূলত কোরিয়ান ভাষার উপর কেমন দক্ষতা অর্জন করেছেন সেটি দেখবে। ট্রেনিংটি ১০ দিনের হয়ে থাকে ৮৪ ঘণ্টার ক্লাস। ক্লাস শেষে একটা পরীক্ষা নিবে সেটি বেশি কঠিন নয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশঃ সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি সমূহের মধ্যে এটি হলো ধাপ। এটি হলো স্বপ্ন পূরণের ধাপ। ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর কোরিয়া যাওয়ার তারিখ দেওয়ার পর প্রস্তুতি নিতে হবে। কোরিয়া যাওয়ার সময় মূলত বোয়েসেল জামানত ১ লাখ টাকা নেই সেটি আপনি পরবর্তীতে ফেরত পাবেন যদি আপনি কোনো কর্মস্থল না পাল্টান।
কোরিয়াতে প্রবেশ করার পর সেখানে আবারও মেডিকেল টেস্ট করতে হয়, কোনো বড় সমস্যা ধরা পরলে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তাই আমরা সময় থাকতে সমস্যা ভালো করে নিবো জেনো স্বপ্নের দেশে প্রবেশ করে ফেরত না পাঠিয়ে দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার মাসিক বেতন কত
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি সমূহ অবলম্বন করে যেতে হবে। কোরিয়া যাওয়া একটি অনিশ্চিত বিষয়। কিন্তু একবার চলে যেতে পারলে সফলতা ঠিকি আসবেই। কোরিয়া গিয়ে কাজের অভাব নেই। কোরিয়াতে মূলত সবার ব্যাসিক বেতন একই ওভার টাইম দিয়ে বেতন অনেকের সাথে কম বেশি হতে পারে এমনটাই স্বাভাবিক।
কোরিয়াতে মাসিক ব্যাসিক বেতন ২০ লাখ উয়ন বাংলাদেশের টাকাই হবে মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ওভার টাইম করলে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা যায়। অনেকের কোম্পানিতে ওভার টাইম নাও থাকতে পারে কিন্তু কখন অন্যের বেতন দেখে কোম্পানি চেঞ্জ করা উচিত নয়।
লেখকের মন্তব্য
দক্ষিণ কোরিয়া চাকরির জন্য কোনো নিশ্চয়তা দেই না। সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ১১টি পদ্ধতি সমূহ সব কমপ্লিট হওয়ার পর সব ভাগ্যের ব্যাপার ভিসা আসলে যেতে পারবেন না হলে পারবেন না। তাই শুধু এটার আসা করে থাকা যাবে না। এটার পাশাপাশি কোনো জব করতে পারেন আপনাদের জীবন পরিচালনা করার জন্য। ভিসা আসলে তখন আপনি সব ফেলে যেতে পারবেন তবে শুধু এটার জন্য বসে থাকলে চলবে না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url