বিটরুট জুস এর ৭টি উপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন

বিটরুট জুস এর ৭টি উপকারিতা এবং বিটরুট এর অপকারিতা সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানেন না। চিন্তার কোনো কারণ নাই সেটা নিয়ে আজকে বিস্তারিত জানাবো। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন তাহলে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পাবেন।

বিটরুট কি ও বিটরুট এর দাম কত সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। বিটরুট খাওয়ার নিয়ম এবং আরও কিছু জানার জন্য পুরো লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ভূমিকা

বিটরুট হলো একটি শীতকালীন সবজি। এই বিটরুটের অনেক গুনাগুণ রয়েছে, বিট স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। বিটরুট কোথায় পাওয়া যায়, বিটের দাম কেমন, বিটরুট জুস এর ৭টি উপকারিতা এবং বিটরুট এর অপকারিতা বিষয়ে নিচের পয়েন্ট গুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিটরুট কি

বিটরুট হলো খাবার জাতীয় একটি সাধারণ সবজি। উত্তর আমেরিকায় এই সবজিটির নাম বিট। তবে এটিকে ব্রিটিশী নাম বিটরুট দেওয়া হয়েছিলো। এই বিটের রং লাল বা বেগুনী দেখতে খুব ছোট, বিটের গাছটি মুলা গাছের মতো। এই সবজিটি শীতকালে পাওয়া যায় তবে বর্তমানে সব সময়ই পাওয়া যায়। এই বিট সবজিটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্মত একটি খাবার।

বিটরুট কোথায় পাওয়া যায়

বিটরুট সবজিটি বাংলাদেশে খুব কম দেখা যায়, আবার বিট সবজি সব সময়ই পাওয়া যায় না। বিট একটি শীতকালীন সবজি হলেও এটি সব সময় পাওয়া যায়। বিট বাংলাদেশি সবজি না হলেও একটি মাঝে মধ্যে বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়াও এই বিট সবজিটি রাশিয়া, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো দেশ গুলোতে বিট পাওয়া যায়।

সাধারণত বাজারে এই সবজিটি দেখতে পেলেও আমরা বিট সবজি কিনতে চাই না। বিটরুট সবজিটি অন্যান্য দেশের একটি সবজি বাংলাদেশে এর চাষ হয় না, কিন্তু কিছু কিছু অঞ্চলে বিটের চাষ হয়ে থাকে।

বিটরুট এর দাম

বিটরুট পুষ্টিগুণ সম্মত সবজি তাই এই বিটের সবজিটি আমাদের সকলের খাওয়া উচিত। বিটের অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাংলাদেশে এই বিটের দাম খুবই স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়। আমাদের দেশে মাত্র ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দামে পাওয়া যায়। তাই এই স্বল্প মূল্যের বিট সবজি আমাদের খাওয়া উচিত।

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

বিটরুট একটি বিদেশী সবজি তাই এই সবজি কিভাবে খাই সেটা অনেকেই জানেন না। বিট খাওয়ার নিয়ম অনেকে না জেনে খেয়ে সমস্যায় পরে যায় তাই বিট খাওয়ার আগে নিয়ম জানা অনেক জরুরি। নিচে বিট খাওয়ার নিয়ম উল্লেখ করা হলো।

  • বিটরুট সবজিটি কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়াও বিটের সালাদ বা তেলে ভেঁজে খাওয়া যায়।
  • বিটরুট বেশি পানিতে ভালভাবে পরিষ্কার করে বিট সিদ্দ করে বিটের উপড়ের বাকল ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর ছোট ছোট করে কেটে সালাদ করে খাওয়া যাবে।
  • বিট কাঁচা অবস্থায় জুস করেও খেতে পারবেন। যাদের ডায়াবেটিক রোগ আছে তারা অতিরিক্ত খাবেন না। এটি সুগার লেবেল বাড়িয়ে দেয়।
  • বিট কাঁচা অবস্থাতে এটিকে মিল্কসেক বানিয়েও খাওয়া যায়।

বিটরুট জুস এর ৭টি উপকারিতা

বিটরুট হলো একটি পুষ্টিগুণ সম্মত সবজি। বিটের উপকারিতা অনেক, এটি ঔষুধী কাজেও লাগে। বিটরুটের জুস খেলে ওজন কমানো যায় তবে বিট অধিক পরিমাণে খেলে মল-মূত্র লাল বা হাল্কা গোলাপি হয়ে যায়। সেটার জন্য ঘাবড়ানো যাবে না।তাই অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাওয়া উচিত নই। বিটরুট জুস এর ৭টি উপকারিতা বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • বিটের জুস খেলে শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়াই।
  • চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • উচ্চ রক্ত চাপ এবং রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • হজমে উন্নতি ঘটায়।
  • মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
  • বিট সবজি গর্ভবতী মহিলাদের উপকার করে।

বিট সবজি তে যেসব উপাদান গুলো হলোঃ ফাইবার, ফোলেট, নাইট্রেট, ম্যাংগানিজ, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি রয়েছে। বিটে রয়েছে ভরপুর নাইট্রেট, যা শারীরিক সক্ষমতা বাড়ায়। ক্লান্ত হওয়ার পর যদি এই বিটের জুস খান তাহলে সহনশীলতা বাড়ায়, শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও হৃৎপিণ্ড ও শ্বাসতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।তাই কোনো কঠোর কাজ করলে বা কোনো প্রতিযোগিতাই নামলে ১ ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা আগে বিটের জুস না খেলে শারীরিক সক্ষমতা পাবেন না।

চোখের জন্য বিটের জুস খাওয়া খুবই উপকারি।বিটে ২ টি ক্যারোটিনয়েড পাওয়া যায়। বিটে লুটেইন ও জিয়াজেনথিন উপাদান রয়েছে যা চোখের জন্য উপকার। পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উচ্চ শক্তি নীল আলো থেকে রক্ষা করে। ফলে চোখে ছানি পরা থেকে ঝুঁকি কমে যায়। নাইট্রেট এর কারণে বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার ঝুঁকি ৩৫% কমে যায়।

বিটেইন উপাদান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় যেটা বিটরুটে পাওয়া যায়। রক্তে বিটেইন এর মাত্রা বাড়লে বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। বিটে রক্ত চাপ ও কমিয়ে দেয়। হজমের বৃদ্ধি ঘটায়।

বিটরুট এর অপকারিতা

বিটরুট এর অপকারিতা বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হলো। বিটরুট খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় আবার এর কিছু অপকারীতাও রয়েছে। যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তারা শুধু পরিমাণ মতো বিট খেতে পারবেন, অতিরিরিক্ত বিট খাওয়ার ফলে সুগার লেবেল ও বেড়ে যায়। যেসব ব্যক্তিদের নিম্ন রক্ত চাপ আছে তাদের বিট খাওয়া উচিত নই। নিম্ন রক্তচাপ থাকায় খেলে ক্ষতি হতে পারে। বিটে অধিক পরিমাণে নাইট্রেট থাকার কারণে রক্ত নালি শিথিল করে এবং প্রসারিত করে রক্তচাপ আরও নিম্ন রক্ত চাপ আরও কমিয়ে দেয়।

যারা গল্ভ ব্লাদারে পাথর এবং কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের জন্য বিট খাওয়া উচিত নই। কিডনিতে পাথর না থাকলে কোনো বিপদ নেই। তবে কারো যদি অক্সাল্লেট কিডনিতে পাথর থাকে তাদের জন্য বিট রুট খাওয়া ক্ষতি হতে পারে। কারণ বিটরুটে অক্সাল্লেট এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যার কারণে কিডনিতে পাথর থাকা আরও গুরুতরও হয়ে উঠে।

অ্যালার্জি থাকা ব্যক্তিদের বিট খাওয়া থেকে এড়ানো উচিত। বিটে অনেক উপাদান থাকে যেটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকার তবে কারো কারো ক্ষেত্রে অনেক উপাদান থাকাই অ্যালার্জি হতে পারে। যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, আমবাত এবং ঠাণ্ডা লাগা এই সব সমস্যা হতে পারে। বিটরুটে যদি আপনার অ্যালার্জি থাকে তবে খাওয়া উচিত নয়।

লেখকের মন্তব্য

আমার মতে, বিট একটি উপকারী সবজি, আমাদের এই সবজি সংগ্রহ করে কাঁচা বা রান্না করে খেলে অনেক উপকার পাবো। তাই আমদেরও বিটরুট সবজিটি সবসময়ই না হলেও মাঝে মধ্যে খাওয়া খুবই প্রয়োজন।

এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তবে আপনার মতামতটি কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং প্রয়োজনে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আরও যে কোনো তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখে আসতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url