রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এবং করণীয় কি?
রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এবং রাসেল ভাইপার কামড়ালে তার করণীয় কি তা নিয়ে অনেকে অনেক জায়গায় তথ্য পেতে চান কিন্তু আপনার মনের মতো করে হয়তো তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেয়, আজকে আপনাদের সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো। লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়বেন, তাহলে আপনি আপনার মনের মতো তথ্য জানতে পারবেন।
রাসেল ভাইপার সাপের বৈশিষ্ট্য কেমন সেই বিষয়েও বিস্তারিত জানানো হয়েছে। আরও কোনো বিষয়ে জানার জন্য পুরো লেখাটি ভালোভাবে পড়বেন।
ভূমিকা
রাসেল ভাইপার খুবই অলস প্রকৃতির একটি সাপ। এই সাপটি তার শিকারের জন্য এক জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গোল করে বসে থাকে। রাসেল ভাইপার সাপটির আসেপাশে কেউ গেলে তাকে কামড় দেয় না, যদি সাপটিকে আপনার দ্বারায় কোনো ভাবে কষ্ট জনক মনে করে তাহলে সাপটি আপনাকে কামড়ে দিতে পারে। রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় পারে সেই সব বিস্তারিত জানবেন।
রাসেল ভাইপার কি
রাসেল ভাইপার মূলত একটি বিষধর সাপের নাম। এই সাপটিকে এখন অনেকেই চিনে ফেলেছেন। এই রাসেল ভাইপার সাপটি বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত। অনেক প্রজাতি সাপের মধ্যে এই রাসেল ভাইপার অনেক বিষাক্ত একটি প্রাণী। রাসেল ভাইপার সাপ অন্য সাপের মতো ডিম পেরে বাচ্চা ফুটাই না, এই সাপটি গর্বধারণ করে এক সাথে ২০ টা থেকে ৪০ টা বাচ্চা জন্ম দেই।
রাসেল ভাইপার সাপের বৈশিষ্ট্য
অনেকে যারা এখন পর্যন্ত রাসেল ভাইপার যদি না জেনে থাকেন তবে তাড়াতাড়ি করে জেনে নিন এই সাপের বৈশিষ্ট্য গুলো কি বা এরা দেখতে কেমন হয়। এই সাপটির গাঁয়ে বড় বড় গোলাকারের মতো একটু কালো রঙের বৃত্ত রয়েছে। পুরো শরীর হাল্কা বাদামী রঙের মতো দেখতে এই রাসেল ভাইপার। এই সাপটি লম্বাই ৬ থেকে ৮ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সাপটির আসে পাশে যদি কেউ থেকে থাকে তবে সতর্ক করে দেই, প্রেশার কুকারের মতো সিটির আওয়াজ দিয়ে থাকে।
রাসেল ভাইপার সাপ কোন দেশের
এই সাপটিকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জেলাই এই সাপটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই সাপটি বাংলাদেশের সাপ নই। রাসেল ভাইপার সাপটি মূলত ইন্ডিয়া দেশের রেজিস্থান এলাকাই বসবাস কৃত সাপ।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়
ইতি মধ্যে আমরা অবশ্যই জেনে গেছি রাসেল ভাইপার সাপটির বিষয়ে, তো এবার জেনে নেওয়া যাক, রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়? রাসেল ভাইপার কামড়ালে তার লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হলো।
- রাসেল ভাইপার সাপ শরীরের যে স্থানে দংশন করবে সেই স্থানটি সাথে সাথে ফুলে যাবে। দংশন কৃত স্থান থেকে রক্ত বা কশ জাতীয় তরল পদার্থ বের হতে থাকবে।
- রাসেল ভাইপার কামড়ে মানব দেহের রক্ত কণিকা বা রক্ত কোষ সাথে সাথে ভেঙ্গে যাবে। দংশন কৃত স্থানটি প্রচণ্ড বেথা শুরু হয়ে যায়।
- রাসেল ভাইপার মানব দেহের যে স্থানে কামড় দিবে সেই স্থানটি পচে গলে যাবে, এমনকি সেই অংশটুকু কেটে ফেলে দিতে হবে।
- রাসেল ভাইপারের মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম বিষে মারা যাবে একটি মানুষ। এই সাপটি ২০০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত বিষ এক কামড়ে ঢেলে দিলে সেই মানুষটির মৃত্যু অনিবার্য।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি?
রাসেল ভাইপার একটি বিষাক্ত একটি সাপ। রাসেল ভাইপার কাউকে ছোবল দেওয়ার আগেই জানতে হবে রাসেল ভাইপার কামড়ালে তার করণীয় গুলো কি কি? এই বিষয়ে জানার পর আপনি কাউকে বাঁচাতে পারেন।
- রাসেল ভাই একটি হিংস্র সাপ, মানুষ দেখতে পেলেই বা তার আসে পাশে থাকলে আক্রমণ করে দেই। এই সাপটি থেকে দূরে থাকা উচিত।
- রাসেল ভাইপার কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যাওয়া উচিত। দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
- রাসেল ভাইপার কামড়ালে দ্রুত এন্টিভেনম নিতে হবে তাহলে সেই রোগী বেচে যাবে। কোনো রকমের মলম বা মালিশ করা যাবে না। কামড়ানোর স্থানটি নড়ানো যাবে না ফলে বিষ ধীরে ধীরে রক্তের সাথে চলাচল করতে পারে।
- রাসেল ভাইপার যে স্থানে কামড়াবে তার একটু উপর থেকে নরম করে বাধতে হবে, বেশি সক্ত করে বাধা যাবে না কারণ বেশি শক্ত করে বাধলে হিমোটক্সিক বিষ রক্তের সাথে মিশে রক্ত কণিকা ভেঙ্গে দিতে পারে।
রাসেল ভাইপার আতঙ্ক
আতঙ্কের আরেক নাম হলো রাসেল ভাইপার। রাসেল ভাইপার বাংলাদেশে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছিলো তবে বর্তমানে বাংলাদেশে রাসেল ভাইপার দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের সকল জেলা গুলোতেই ছড়িয়ে পরেছে রাসেল ভাইপার। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, নারায়ানপুর এই জেলা গুলোতে বেশি দেখা মিলছে রাসেল ভাইপারের। এছাড়া পদ্মা নদীর ধারেও দেখা মিলছে।
এরা ধানের জমিতে, নদীর ধারে জন্মানো ঘাসের ঝোপে থাকে। তাই কৃষক ধান কাঁটার জন্য ভয় পাচ্ছে। রাসেল ভাইপার মূলত খাবার খাওয়ার জন্য ধানের জমিতে যায়। রাসেল ভাইপারের কামড়ে মারা গেছেন অনেকেই বেঁচেছেন কয়েকজন মাত্র। রাসেল ভাইপারের কামড়ে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত নিরাপদ মনে করা যাবে না। কারণ এই সাপটি খুবই বিষধর একটি সাপ।
এই সাপটি খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। বছরে ২০ থেকে ৪০ টি বাচ্চা জন্ম দেয়, এছাড়াও ৮০ টি পর্যন্ত বাচ্চা দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে এই রাসেল ভাইপারের। রাসেল ভাইপার সাপের কারণে বাংলাদেশের গ্রামবাসীরা খুবই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
আমাদের সকলের বাড়ির আসে পাশে যদি কোনো জংগল থাকে সেটা অতি দ্রুত সম্ভব কেটে পরিষ্কার করতে হবে। বিনা কারণে রাত্রের বেলাই বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। মাঠে ঘাঁটে যাওয়ার সময় ভালভাবে দেখে চলাফেরা করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
রাসেল ভাইপার একটি অলস প্রকরটির সাপ। এই সাপটি এক জাইগায় বসে থাকে, লাফ দিয়ে কামড় দেয়। কে কি বললো তাতে কান দেওয়ার প্রয়োজন নেয়। রাতের বেলায় যদি কোথাও মাঠে বা নদীর ধারে যান তাহলে জামবুট জুতা পরে যাবেন। কারণ কোনো সাপ কামড়ালে বিষ লাগবে না। আপনাদের জানিয়েছি, রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এবং রাসেল ভাইপার কামড়ালে তার করণীয় কি এই সব জেনে আপনারাও উপকৃত হবেন এবং অন্যদের ও জানিয়ে সতর্ক করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url